ত্বকে ফুসকুড়ি, ব্রণ এবং ত্বকের অ্যালার্জি দেখা দিলে ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হতে থাকে। এর পাশাপাশি এই অ্যালার্জি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। আজকের নিবন্ধে আমরা ত্বকের অ্যালার্জি নিয়ে বিশেষ আলোচনা করব। তাই এই বিষয় শুরু করা যাক.
আমাদের ত্বকে জ্বালাপোড়া বা যেকোনো ধরনের সংক্রমণ যা ত্বকে চুলকানি, লাল ফুসকুড়ি বা টান সৃষ্টি করে তাকে স্কিন অ্যালার্জি বলে। স্কিন অ্যালার্জি মানে আমাদের ত্বক একটি বিশেষ জিনিসের প্রতি সংবেদনশীল।
![ত্বকের অ্যালার্জির কারণ, লক্ষণ](https://shikhore.com/wp-content/uploads/2023/10/SumoWebTools_1696265891-1696265954.webp)
ত্বকের অ্যালার্জির ধরন
ত্বকের বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি আছে। এটি মানুষের মধ্যে নিম্নলিখিত ধরনের দেখা যায়-
1.) ছত্রাক সংক্রমণ
ছত্রাকের সংক্রমণ হল ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট এক ধরনের ত্বকের অ্যালার্জি। একে মাইকোসিসও বলা হয়। ছত্রাকের সংক্রমণ মুখ, হাত বা শরীরের যেকোনো অংশের ত্বকে হতে পারে।
এই অ্যালার্জিতে ত্বকে এক ধরনের রুক্ষতা তৈরি হতে থাকে।
এর পাশাপাশি মুখে অ্যালার্জি থাকলে ভ্রুর চুলও পড়তে পারে। ছত্রাক সংক্রমণের জন্য চিকিত্সা করা গুরুত্বপূর্ণ অন্যথায় এটি শরীরের টিস্যু, হাড় এবং অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করতে শুরু করে।
2.) Lichen Planus
এটিও এক ধরনের ত্বকের সংক্রমণ বা ত্বকের অ্যালার্জি যা 30 বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে দেখা যায়।
এই ত্বকের অ্যালার্জিতে ব্যক্তির ত্বকে কিছু উজ্জ্বল দাগ দেখা দেয়। এগুলো শরীরে এক ধরনের লাল ফুসকুড়ি আকারে দেখা দেয়। এই ত্বকের অ্যালার্জি শরীরের যে কোনও অংশে হতে পারে তবে কব্জি, নীচের পা, পিঠ, ঘাড় ইত্যাদিতে এই অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আমরা যদি এই অ্যালার্জির কারণ সম্পর্কে কথা বলি তবে এটি আসলে জেনেটিক বা বংশগত। পারিবারিক ইতিহাসে কেউ যদি কখনও এই ধরণের চর্মরোগ থেকে থাকে, তবে আগামী প্রজন্মেও এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
3.) একজিমা
একজিমা একটি খুব সাধারণ অ্যালার্জি হিসাবে বিবেচিত হয়। আসলে, এই অ্যালার্জি কখনও কখনও মানুষের মধ্যে দেখা যায়। এই ধরণের ত্বকের অ্যালার্জিতে, ত্বক ফুলে যায় এবং ত্বকে একটি লাল ভূত্বকও তৈরি হয়।
একভাবে, ত্বকের উপরে আরেকটি মরা চামড়া দেখা দেয়। এর পাশাপাশি এই স্কিন অ্যালার্জিতে ত্বকে প্রচুর চুলকানি হয়। এটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশু উভয়ের ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে, তবে এই অ্যালার্জি একজন থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে না।
আরো পড়ুন : কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়।
4.) আমবাত
![ত্বকের অ্যালার্জি](https://shikhore.com/wp-content/uploads/2023/10/types-rashes-slide42-700x393.webp)
জাম্পিং আমবাত সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন। এটি এক ধরনের ত্বকের অ্যালার্জি যাতে ত্বকে বড় বড় লাল দাগ দেখা যায়। ত্বকের এই লাল দাগের কারণে অসহনীয় চুলকানি হয়। ঘামাচি করলে এই অ্যালার্জি দ্রুত বেড়ে যায়। আমবাত হলে গেরুয়া পাউডার ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি কাঁচা দুধ দিয়েও এই অ্যালার্জির চিকিৎসা করা হয়। এগুলি হল এক ধরণের পুরানো পদ্ধতি যা অ্যালার্জির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পাশাপাশি এই অ্যালার্জিও কয়েকদিনের মধ্যে নিজেই সেরে যায়।
ত্বকের অ্যালার্জির কারণ
ত্বকের অ্যালার্জি আসলে একটি নির্দিষ্ট জিনিসের প্রতি ত্বকের সংবেদনশীলতার প্রভাব। সহজ কথায়, আমাদের ত্বক যদি কোনো বিশেষ জিনিসের প্রতি সংবেদনশীল হয়, তাহলে সেই জিনিসের প্রভাবে ত্বকে ব্রণ, ব্রণ বা লাল ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। ত্বকের অ্যালার্জির আরও কিছু কারণ রয়েছে। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক সেগুলি কী
আরো পড়ুন : শরীর দুর্বলতা: কারণ, লক্ষণ
1.) পারফিউম থেকে অ্যালার্জি
কারো কারো পারফিউমে অ্যালার্জি থাকে। এই ধরনের লোকেরা সুগন্ধি ব্যবহার করলে তাদের ত্বকে লাল ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
উপায় : এই ধরণের অ্যালার্জি থাকলে নিজের শরীরকে বডি স্প্রে বা পারফিউমকে ত্বকের থেকে দূরে রাখতে হবে এবং শরীরকে পরিষ্কার রাখতে হবে
2.) ধাতু এবং গয়না থেকে অ্যালার্জি
কিছু লোকের ত্বক ধাতু এবং গহনার প্রতি সংবেদনশীল। এই ধরনের লোকেরা যদি ধাতব গহনা পরেন তবে তারা ত্বকে তীব্র চুলকানি অনুভব করতে পারে। গ্রীষ্মে এই গহনা ঘামের সংস্পর্শে এলে ত্বকে অ্যালার্জি হয়। এরকম হলে ওই ধরণের গহনা কম ব্যবহার করা বেশ ভালো।
3.) কৃত্রিম কাপড় থেকে
কিছু লোকের সিন্থেটিক জামাকাপড় থেকেও অ্যালার্জি হয়। কেউ কেউ জর্জেটের পোশাক পরেও অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। ত্বক সিন্থেটিক কাপড়ের প্রতিও সংবেদনশীলতা দেখায়। এ ধরনের ক্ষেত্রেও অ্যালার্জি দেখা দেয়।
এক্ষেত্রে সিন্থেটিক কাপড় ব্যবহার কমিয়ে সুতির কাপড় ব্যবহার করা বেশ উপকারী হতে পারে এবং সামান্য ঢিলে পোশাক পরা উচিত শরীরে যেন হাওয়া চলাচল করে।
4.) প্রসাধনী এলার্জি
ফাউন্ডেশন, কাজল বা মাসকারার মতো বিভিন্ন ধরনের বিউটি প্রোডাক্ট থেকেও মানুষের অ্যালার্জি হতে পারে। এরকম হলে মেকআপ এর কারণে সৌন্দর্য পাওয়ার থেকে বেশি কষ্ট পেতে পারেন ও চেহারা আরো খারাপ হতে পারে।
এর থাকে বাঁচতে প্রাকৃতিক বস্তু গুলি ব্যবহার করে নিজের সৌন্দর্য বাড়াতে পারেন এটি ত্বকের জন্য অনেক আরাম দায়ক হবে।
5.) এন্টিসেপটিক থেকে অ্যালার্জি
থিমেরোসল, অ্যান্টিসেপটিক যা ভ্যাকসিনকে নিরাপদ রাখে, এছাড়াও ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে।
6.) পশুর চামড়া থেকে
কিছু লোক পশুর পশম বা চামড়া থেকেও অ্যালার্জিযুক্ত। এই ধরনের লোকেরা কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি স্পর্শ করলে তাদের ত্বকে জ্বালাপোড়া বা চুলকানির অনুভূতি হয়। এ ছাড়া অ্যালার্জির আরও কিছু সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে খাদ্যদ্রব্য, সাবান, সুগন্ধি, চুলের রং, সাবান, নেইল পেইন্ট, সানস্ক্রিন ইত্যাদি যার কারণে মানুষের ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।
৭.) খাবারে কারণে অ্যালার্জি
অনেকের খাবারের কারণেও অ্যালার্জি হয়ে থেকে যেমন : মাছ ,মাংস, ডিম্ , খাসীর মাংস, চিংড়ি মাছ , এরকম বেশি প্রোটিন যুক্ত খাবার গুলি অনেকের শরীরে অ্যালার্জি আনতে পারে। এছাড়াও বেশি তেল মশলা যুক্ত খাবার অনেকের শরীর সহ্য করতে পারেনা।
অ্যালার্জির সাধারণ লক্ষণ
ত্বকের অ্যালার্জির কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে দেওয়া হল-
1.) ত্বকে জ্বালাপোড়া বা চুলকানি
2.) ত্বকে লাল ফুসকুড়ি দেখা
3.) ত্বক ফুলে যাওয়া
4.) ত্বকে মৃত কোষ বা অন্যান্য ত্বকের বৃদ্ধি
5.) ত্বকে ফুসকুড়ি
6.) ত্বকের লালভাব
ত্বকের অ্যালার্জি নির্ণয়
স্কিন এলার্জি টেস্ট করে জানা যায় কোন স্কিন এলার্জি আছে সেই ব্যক্তির। আসুন এক এক করে ত্বকের অ্যালার্জি এবং তাদের রোগ নির্ণয় নিয়ে বিশেষ আলোচনা করা যাক- Instagram- Follow : shikhore100