প্রত্যেক এর বিয়ের বয়স হলে বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন চিন্তা ধারা মাথার মধ্যে ঘরে। সেই সব চিন্তার মধ্যে লাভ ম্যারেজ ও অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ কোনটি সেরা এই ভাবনা সবার মধ্যে আসে। এই লেখার মাধ্যমে এই বিষয়ের বিভ্রান্ত দূর করার কিছু উপায় আলোচনা করা হয়েছে। যা আপনাকে সাহায্য করবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে।
লাভ ম্যারেজ ও অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ সব রকম সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন মতা মত। আবার ধর্ম অনুসারে বলা হয় বিয়ের জুড়ি স্বর্গ থেকে ঈশর ঠিক করে পাঠায়।
![লাভ ম্যারেজ ও অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ সব রকম সুবিধা ও অসুবিধা।](https://shikhore.com/wp-content/uploads/2023/01/8c1bf266-b516-4ebb-aa7e-673aa31bd81d-1-1024x585.jpg)
বর্তমান সময়ে বিয়ের আগে প্রেম সম্পর্কে বেশির ভাগ ছেলে ও মেয়েরা জড়িয়ে পড়ে। তাই প্রত্যেক ছেলে ও মেয়ে চায় বিয়ে তার নিজের পছন্দের সঙ্গী ও সঙ্গিনী কে বেছে নিতে। কিন্তু পরিবারের সবাই চায় তাদের পছন্দের পাত্র পাত্রীর সাথেই বিয়ে দিতে। সেই জন্য পরিবারের সাথে ছেলে ও মেয়ের মতবিরোধ দেখা দেয়। যারা এই প্রেম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে না তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া একটু সহজ হয়ে যায়। কিন্তু বাকিদের মনে এই ব্যাপার নিয়ে খুব চিন্তিত দেখা যায়।
তবে এখানেই শেষ নয় লাভ ম্যারেজ ও অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ কোনটি আপনার জন্য সেরা। এটি আপনি তখনি জানতে পারবেন যখন আপনি এদের কিছু ভালো ও খারাপ দিক গুলি জানতে পারবেন তবেই আপনার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।
লাভ ম্যারেজ করার সুবিধা।
বর্তমান সমাজে love marriage সম্পর্কে কেউ অজানা নয়। এমন কি এই বিষয় তা এখন সবার এর কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। love marriage এর ভালো দিক গুলি হলো…..
১ – love marriage এ ছেলে ও মেয়ে দুইজনেই বিয়ের আগে থেকে একে অপরকে জানে। আগে থেকে মন দেওয়া নেওয়া হয়ে থাকে তাই নিজের মন পছন্দের সঙ্গী সঙ্গিনী পেয়ে থাকে।
২ – প্রেম ভালোবাসা ও বিয়ে সবকিছুই বিশ্বাস উপর ভিত্তি করে চলে। সেই জায়গায় যদি একে অপরকে বিশ্বাস করে নিজেদের জীবন সাজিয়ে নিতে চায় সেটা অবশই arranged marriage এর থেকে ভালো
৩ – প্রেম একদিনের হোক কিংবা দীর্ঘ দিনের হোক। প্রেম বিবাহতে একে অপরের সাথে বোঝাপড়ার সম্পর্ক বেশ ভালো হয়। ছোট খাটো সমস্যা নিজেরাই সমাধান করার ক্ষমতা রাখে।
৪ – দুজন দুজনের দোষ -গুন্ ,ইচ্ছা -অনিচ্ছা ,ভালোলাগা -খারাপ লাগা ,এই সব বিষয়ে একটা সঠিক ধারণা থাকে। যেটা বিবাহ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫ – নিজের জীবন সঙ্গী বা সঙ্গিনীর মধ্যে কি কি গুন থাকা প্রয়োজনীয় তা দেখে নেওয়ার সুযোগ টুকু ছেলে মেয়েদের মধ্যে থাকে। যার ফলে ভবিষতে ভুল বোঝাবুঝির প্রবণতা কমে যায়
৬ – বর্তমান সমাজে পন লেনদেনের প্রথা এখনো রয়েছে। যেই বিষয় টা সমাজের জন্য খুবই খারাপ। তাই প্রেম বিবাহ করলে পরিবার এর বড়োরা এই বিষয়ের প্রতি চুপই থাকেন। তাই love marriage করলে পন নিয়ে কোনো ঝামেলা থাকে না।
লাভ ম্যারেজ এর অসুবিধা।
প্রেম ভালোবাসা করে বিয়ে করলে সবদিক থেকে এর সুবিধা থাকেনা কিছু ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম ও হয়ে থাকে। এগুলি ও জানা দরকার।
১ – প্রেম করে বিয়ে করলে সবার ক্ষেত্রে পরিবারের support এ থাকেনা ফলে। ভালোবাসা কে পেতে গিয়ে নিজের আপন পরিবারের কাছে পর হয়ে যেতে হয়। বিয়ের পর পরিস্তিতি সবার স্বাভাবিক থাকেনা। তাই অবশই প্রেম বিবাহ করার আগে পরিবার কে মানিয়ে নিয়ে বিয়ে করা উচিত।
২ – প্রেম বিবাহ করার পরে husband ও wife এর মধ্যে কোনো বড়ো সমস্যা হলে পরিবারের সাহায্য পাওয়া মুশকিল হয়ে ওঠে।
৩ – বিয়ের আগে ছেলে ও মেয়ে একে ওপরের সাথে মেলামেশার কারণে একে ওপরের প্রতি সন্মান থাকলেও একে ওপরের প্রতি যে ভয় সেই ভয় কিছু ক্ষেত্রে অনেকটা কমে আসে যার কারণে ছোট খাটো ঝামেলা লেগে থাকে।
৪ – love marriage একে অপরকে বিশ্বাস করে ও অনেক আশা নিয়ে তবেই সিদ্বান্ত নেয়। কিন্তু বিয়ের পর সেই আসা ও বিশ্বাস এর একটু এদিক ওদিক হলে নানান রকম ঝামেলা হতে পারে। ভুল বোঝা বুঝি হয়ে থাকে ও এই কারণেই সম্পর্কের মধ্যে ফাটল লাগতে পারে।
৫ – বিয়ের আগে যদি প্রেম সম্পর্কে কোনো রকম physical রিলেশন হয়ে থাকে তবে বিয়ের পরে একে ওপরের প্রতি সম্পর্কের আকর্ষণ কমে আসে। হক কোনো মোতেই বিবাহ জীবনে মাননীয় নয়। এটা সব থেকে খারাপ দিক love marriage এর জন্য।
love marriage এ যেমন সুবিধা অসুবিধা আছে। তেমনি arranged marriage এর ও কিছু সুবিধা অসুবিধা আছে।
অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ সুবিধা।
সম্পূর্ণ দুটি অচেনা ও আলাদা পরিবার এর মধ্যে শুধুমাত্র কথোপকথন ও বিশ্বাস এর ভিত্তিতে হটাৎ করে গড়ে উঠে। ফলে সহজে কেউ কাউকে ভালো ভাবে চিনতে বা বোঝে উঠতে পারেনা। একটা লম্বা সময় লেগে যায় স্বাভাবিক হয়েউঠতে। বেশির ভাগ অরেঞ্জ ম্যারেজ এই ভাবেই হয়।
১ – পারিবারিক বিবাহ তে যেহেতু পরিবারের সবাই বিয়ে তে অংশ নেয়। তাই সবাই বিয়ের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। বাবা, মা, পরিবারের সবাই এর সমাজে মান সম্মান বজায় থাকে ও তাদের মনে হয় তাদের দায়িত্ব তারা পালন করতে পেরেছে।
২ – প্রেম বিবাহ করতে গিয়ে অনেক সময় ছেলে ও মেয়েরা প্রেমের অন্ধকারে ডুবে গিয়ে জীবনে একজন ভুল সঙ্গীকে জীবনে ডেকে আনে ও পরে নানান সমস্যায় জীবন কাটে। দেখা শুনা করা বিয়েতে যেহেতু পরিবারের সবাই মিলে উপযুক্ত পাত্র পাত্রীর সন্ধান করে, তাই তারা ভালোভাবে খোঁজ করে তবেই বিয়ের জন্য হ্যাঁ করে।
৩ – পাত্র ও পাত্রীর মা-বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা একত্রিত হয় একজন সর্বগুণ সম্পন্ন নারী বা পুরুষের হাতে তুলে দেন তাঁদের বাড়ির মেয়ে বা ছেলেকে।
৪- arranged marriage তে যেহেতু দুটি পরিবার এক সাথে মিলে বিয়ে ঠিক করেন। তাই বিয়ের পর দুই পরিবারের মধ্যে আত্মীয় বাড়ে ও ভবিষ্যতে বিবাহ জীবনে কোনো সমস্যা হলে পরিবারে সবাই কে পাশে পাওয়া যায়।
৫ – বর্তমান সময়ে ছেলে ও মেয়েরা স্বাধীন ভাবে বাঁচতে গিয়ে বিয়ে না করে অন্যান্য পথ বেছে নেয়। ফলে নিজেরাই নিজেদের জীবন কে বিপদে ফেলে। তাই পরিবার এর উচিত সময় থেকে বিয়ে করিয়ে দিয়ে ছেলে মেয়েদের জীবনে ভুল হতে দেয় না।
৬ – যেহেতু দেখাশুনা বিয়েতে পাত্রও পাত্রী একে অপরের সম্পর্কে আগে থেকে খুব বেশি কিছু জানেন না, তাঁদের কাছে একে অপরকে জানার ইচ্ছে থাকে। ও একে ওপরের প্রতি লজ্জা ,ভয় ,সম্মান বজায় থাকে তাই মানিয়ে নেয়ার প্রবণতা থাকে।
অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ অসুবিধা।
সম্বন্ধ করে বিয়ের কিছু অসুবিধা আছে।
১ – বর্তমান সমাজে পন দেওয়া নেওয়ার প্রবণতা এখনো রয়েছে তাই ,মেয়ের বাড়িতে বেশি অৰ্থ সম্পদ না থাকলে ভালো পাত্রের সন্ধান পেলেও তাদের সঙ্গে পেরে উঠতে পারেনা, বিয়ে হয়ে গেলেও গৃহ বধূ কে হিংসার শিকার হতে হয়। স্বামীর বাড়িতে নির্যাতিত হতে হয় ,যা অত্যান্ত জঘন্য ব্যাপার আজকের দিনে।
২ – বিয়ের সময় পরিবারের সবাই পাত্র পাত্রীর সমন্ধে ভালো গুনের কথা শুনিয়ে বিয়ে করায় ,পরে সাংসারিক জীবনে কোন সমস্যা হলে একে ওপরের খোঁটা শুনতে হয়। এর শিকার বেশি মেয়েরাই হয়।
৩ – আবার অনেক সময় শুধু মাত্র আর্থিক অবস্থা দেখে কোনো রকম গুনের বিচার না করে বিয়ে করানো হয়। সেখানে একে ওপরের সাথে মিল না করতে পারলে মানিয়ে নিতে কষ্টদায়ক হয়।
৪ – অনেক সময় পাত্র ও পাত্রী পরিবারের কথা ভেবে arranged marriage করতে রাজি হয়ে যায় , কিন্তু বিয়ের আগে অন্য কারুর সাথে প্রেম সম্পর্কে জড়িয়ে থাকায় তাকে মন থেকে বের করতে পারেনা। তাই বিয়ের পর এগুলি জানাজানি হলে সম্পর্কে মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
৫ – বিয়ে নিয়ে সবার মনে নানান ভাবনা ও আসা আছে কিন্তু পরিবারের কথায় বিয়ে করার পর। সেই আসার ব্যাতিক্রম কিছু ঘটলে একে অপরকে অযোগ্য সাথী মনে করে। ও পরিবার কে দোষ দেয়। আজকাল বিষয় এই নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নানান crime হয়ে থাকে।
শেষকথা :- লাভ ম্যারেজ নাকি অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ
বিয়ে সমূর্ণ নিজস্ব সিদ্বান্ত তে করা উচিত সেটা প্রেম বিবাহই হোক আর পারিবারিক দেখাশুনা বিবাহ হোক। বিয়ের জন্য নিজেকে তৈরী করেই তবেই বিয়ে করা উচিত। আমার মতে বিয়ে বিয়ে নিজের পছন্দে হোক আর পরিবারের পছন্দে, বিবাহিত জীবন তখন ই সুখের হয় যখন একে অপরকে বুঝতে শেখে ,হাজার ভুল বোঝাবুঝি হলেও মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আর মানসিকতা থাকে। দিনের শেষে কাজের পর একে ওপরেরহাসি মুখ জন্য অপক্ষা করে ,একে ওপরের ভালোলাগা কে গুরুত্ব দিয়ে, সারা জীবন একসাথে বাঁচার পরিকল্পনা রাখতে হবে।
বৈবাহিক জীবন নিয়ে যে যাই কথা বলুক শেষে স্বামী স্ত্রী দুইজনকেই সংসার করতে হবে, তাই কারোর ভবিষৎ দেখা আমাদের প্রতিবেদন এর উদেশ্য নয়। আমাদের উদেশ্য আপনাকে সঠিক ভাবে গাইড করা। ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা
আরো পড়ুন :- বিয়ে করার সঠিক সময় কখন।
Hi, this is a comment.
To get started with moderating, editing, and deleting comments, please visit the Comments screen in the dashboard.
Commenter avatars come from Gravatar.