Father-Son Friendship: বাবা-ছেলের বন্ধুত্ব কেমন হওয়া দরকার। ভালো বাবা হওয়ার উপায়।

বাবা-ছেলের বন্ধুত্ব সম্পর্কের মধ্যে বিশেষ কিছু আছে। এটি সুস্পষ্ট বলে মনে হতে পারে কারণ, ছেলেরা যখন ছোট হয়, তারা তাদের পিতার দিকে তাকিয়ে থাকে এবং তাদের প্রশংসা করে। মানুষ হোক বা হাতি, সবাই তারা তাদের বাবার-মায়ের আচার-ব্যবহার অনুকরণ করে, তাদের বাবার আগ্রহের প্রতি আগ্রহ দেখায় এবং দুঃখ হোক কিংবা আনন্দের সময় বাবার উপস্থিতি উপভোগ করে।

বাবা-ছেলের বন্ধুত্ব কেমন হওয়া দরকার
বাবা-ছেলের বন্ধুত্ব কেমন হওয়া দরকার

কিন্তু যখন শিশুরা বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করে, তারা তাদের পিতামাতার থেকে আলাদা হতে শুরু করে এবং তাদের নিজস্ব পরিচয় তৈরি করার চেষ্টা করে। সন্তান ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে বাবা মায়ের থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। তবে এটি স্বাভাবিক হলেও কিছু ক্ষেত্রে অনেক মাতা-পিতার কাছে এটি একটি লড়াই মনে হতে পারে। কিন্তু পিতা ও পুত্রের সম্পর্কটি অনেক আলাদা হয় আর অন্যান্য সম্পর্কের থেকে।

একটি শক্তিশালী পিতা-পুত্রের সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কি কি প্রয়োজন।

তাহলে কীভাবে একজন পিতা তার ছেলেকে সমর্থন করে এবং তার সাথে সংযুক্ত থাকে যখন সে একজন যুবক হয়ে ওঠে। এটি একটি শক্তিশালী সম্পর্কগত ভিত্তি দিয়ে শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ – একটি পুত্রের বিকাশের বছরগুলিতে জড়িত এবং দায়িত্বশীল পিতা হওয়ার জন্য এই কিছু সহজ পদক্ষেপ পিতা-পুত্রের সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে পারে।

৫-১২ বছর বয়সে বাবা-ছেলের বন্ধুত্ব কেমন হওয়া দরকার।

সাধারণত ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা। তাই এই বয়সসীমার মধ্যে থাকা শিশুকে নিঃশর্তে শুধু ভালোবাসুন এটাই তার প্রাপ্য বাবা-মায়ের থেকে। এবার আসি এই বয়স সীমার উর্ধে ,৫-১২ বছর বয়স। এই বয়স টি হলো শুধুমাত্র শেখার বয়স,বাবা মা শিশুর সাথে যেমন ব্যবহার করবে শিশুরা শুধুমাত্র সেটাই শিখবে, তাই প্রত্যেক বাবার যা যা করা উচিত তাহলো

১. আপনার শিশু ও শিশুর মাকে সম্মান দিন।
আসলে এটির কারণ হলো সন্তান যখন প্রতিটা মুহূর্ত আপনাকে অনুসরণ করে তখন সে আপনার ব্যবহার, কথাবার্তা,ইত্যাদি নিখুঁত ভাবে লক্ষ করে। তাই আপনি যদি তাদের সাথে রেগে, কিংবা ভয় দেখিয়ে কথা বলেন, তখন তার মনে আপনার প্রতি রাগ ভাবটি থাকবে ও আপনার সাথে কথা বলার আগ্রহ থাকবেনা। তাই বাবা হিসেবে যদি তার সাথে ও তার মায়ের সাথে হেঁসে ও সম্মানের সাথে মিশেন তবে সেও আপনাকে সম্মান দিতে শিখবে ও আপনার সাথে আরো ভালো করে মিশতে সাহস পাবে ও অনেক কথা বলতে আগ্রহ হবে।

২. আপনার বাচ্চাদের সাথে সময় কাটান।
বাবা হয়ে আপনি যদি আপনার বাচ্চাদের সাথে সময় কাটান তবে তারা আপনার কাছে নিজেকে মূল্যবান বোধ করবে। আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার জন্য অপেক্ষা করবে। তাই কাজের ফাঁকে যেটুকু টাইম আপনি ফ্রি পাবেন সেটি শুধুমাত্র আপনার পরিবার কে দিন। এতে করে আপনি ছেলেকে নানান গল্প শোনাতে পারেন, তাকে লেখা-পড়া করাতে পারেন, ছুটিতে কোথাও পিকনিক করতে পারেন। তাহলে আপনি আপনার ছেলের চোখে কোনো সুপার হিরোর থেকে কম হবেননা।

পিতা-মাতা এবং সন্তানের সম্পর্ক
বাবা-ছেলের বন্ধুত্ব

৩. বাচ্চাদের কথা শোনার চেষ্টা করুন ও ধর্য্যশীল হয়ে উঠুন।
এই বয়সে সন্তানরা বেশ কৌতূহলী হয় নানান নতুন জিনিস গুলি দেখে যার কারণে তাদের মনে নানান প্রশ্ন জাগে সেগুলি যদি সে আপনার কাছে তুলে ধরে তবে নির্দ্বিধায় হাঁসি মুখে সেগুলির উত্তর দিতে থাকুন, ও তাকে বোঝাতে থাকুন যার করণে সে প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর পায় ,ও তার মনে কোনো শঙ্কা না থাকে। এরকম তা করলে সে জানবে যে তার বাবা অনেক কিছু জানে তাই ভবিষ্যতে আরো অনেক কথা বলার সাহস থাকবে তার মনে। সে প্রত্যেকটি কাজ আপনাকে জানিয়ে আপনার মতামত নিয়ে করার চেষ্টা করবে।

৪. ভালবাসার সাথে শৃঙ্খলা বজায় রাখুন।
এই বয়সে শিশুরা বেশ চঞ্চল হয় তাই তাদের সঙ্গে মিশতে, কথা বলতেও ভালো লাগলেও, প্রতিটা বাবা মায়ের উচিত তার চাঞ্চল্যতে সমর্থন করলেও সেটির শৃঙ্খলা বজায় রাখুন, অর্থাৎ প্রয়োজনে শাসন করতে ভুলবেননা। শিশুরা যেমন প্রতিটা সময় বাবা-মা ও অন্য বড়দের অনুসরণ করে। তেমনি বাবা-মায়ের ও উচিত শিশুর কার্য কালাপের উপরে নিজের মত প্রকাশ করা। এমন কিছু কার্য কালাপ যেটি শিশুর জন্য ভালোনা সেটির বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করুন। সেটি যেন ছেলে বুজতে পারে।

ওপরের নিয়ম গুলি শুধুমাত্র ৫-১২ বছরের ছেলে মেয়েদের জন্য এর থেকে বেশি বয়সের ছেলে-মেয়েদের সাথে মিশতে বাবাকে যা করতে হবে তা নিচের অংশে পড়তে থাকুন

১৩-১৭ বছর বয়সে বাবা-ছেলের বন্ধুত্ব কেমন হওয়া দরকার।

এই সময় টি বাবা ও ছেলের জীবনের বেশ গুরুত্ব পূর্ণ সময়। ছেলের সঠিক ভবিষৎ গড়ে তোলার জন্য বাবার ভূমিকা বিশেষ প্রয়োজন ১২-১৭ বছর বয়সী ছেলেদের জন্য।

১. ছেলের কাছে মতামত প্রকাশ করুন।
ছেলে যখন আশে পাশের নানান বিষয় গুলি বুঝতে শেখে তখন সে কনফিউসড হয়ে যায়। তার কি করা উচিত সেটি নিজের বুদ্ধিতে বোঝে উঠতে পারেনা। তখন তার চাই অভিজ্ঞ ব্যাক্তির পরামর্শ আর সেটি যদি বাবা হিসেবে আপনি তাকে দিতে পারেন। ও আপনার মতামত টি পেয়ে সে যদি সঠিক বিষয়টি খুঁজে পায় তাহলে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে।

২. ছেলেকে সমর্থন দিন
অনেক বাবা-মা ছেলেকে প্রেসারাইজ করে যে তোমাকে এটা করতে হবে ,বিশেষ করে পড়াশোনা নিয়ে প্রত্যেক বাবা-ছেলের মধ্যে এই ঝামেলা হয়েই থাকে, বাবা-মা জোর করে নিজের বিচার ছেলের ওপরে চাপিয়ে দেয়। এটি মোটেই ঠিক নয়। ছেলেকে চিন্তা করতে দিন যে তার কি ভালো লাগে। এবং সেটি যদি সমাজ বিরোধী কাজ না হলে তাকে সমর্থন করুন। মনে রাখবেন জীবন শুধু টাকা অর্জন করার জন্য নয়। ছেলেকে হাসি খুশি ভবিষৎ উপহার দিন ও ছেলের মন চাওয়া কাজে সমর্থন দিন।

৩. ছেলের ভুলগুলি ধরিয়ে দিন
ছেলেরা ১৩ – ১৭ বছর বয়সে প্রত্যহ ভুল করে থাকে। প্রত্যেকটি বাবার উচিত ছেলের ভুলগুলি ধরিয়ে দেওয়া ভবিষতে সেই ভুল গুলি যেন আর না করে সেগুলির দিকে লক্ষ রাখা। প্রত্যেকটি ভুল মানুষকে নতুন কিছু শেখায়। বাবার উচিত সেই ভুল গুলির দ্বারা ছেলেকে নতুন কিছু শেখানো।

৪. ছেলের প্রিয় বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করুন
ছেলে যখন ১৬ ১৭ বয়সে চলে আসে তখন ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নাই ছেলের সাথে মেশার। আসলে তখন ছেলে পুরো পুরি ভাবে সক্ষম আপনার কথা বোঝার জন্য তাছাড়াও ছেলের জীবনে নানান ঘটনা ঘটতে থাকে যেগুলি সে চাইবেনা তার পরিবার জানুক। এই সময়ে আপনি যদি তার সবথেকে ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন তবে ছেলে কোনো কিছুই আপনার থেকে লুকিয়ে রাখতে চাইবে না। ফলে বাবা হিসেবে আপনি তাকে সহজে মনিটর করতে পারবেন। ছেলেও তার মনের মধ্যে বাবার জন্য বিশেষ উঁচু জায়গা রাখবে। বাবা হিসেবে আপনি ছেলের কাছে তার রোল মডেল হতে পারবেন।

১৮-২৫ বছর বয়সে বাবা-ছেলের বন্ধুত্ব কেমন হওয়া দরকার।

ছেলেকে সুনিদিষ্ট ও একটি শান্তিপূর্ণ পারিবারিক জীবন দিতে হলে পিতাকে যে কার্য গুলি করতে হয় তা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

১. পুত্রকে একা থাকতে দিন
আসলে ছোট থেকে আপনি যত কিছু আপনার ছেলেকে শিখিয়েছেন এই সময়টি হলো তার পরীক্ষা। এই সময়টি হলো পিত-পুত্রের মধ্যে প্রতিদ্বন্তিতার সময়। পিতা যদি ডান দিকে যেতে চায় তো পুত্র যেতে চায় বাম দিকে। তাই প্রায় এই সময় পিতা-পুত্রের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। তাই এই সময় পুত্রকে একা থাকতে দিলে সে তার মতো করে তার জীবন তা সাজানোর চেষ্টা করবে। ও সময়ে ঠিক তার বাবার কাছে আবার ফিরে আসবে।

২.ছেলের ব্যার্থতায় তার সাথ দিন
প্রত্যেক ছেলে এই সময় নিজের ভবিষৎ নিয়ে চিন্তা করে ও কিছু না কিছু করার চেষ্টা করে। ফলে সে তার কাজে বার্থ হতে পারে এটি স্বাভাবিক। তবে এতে তাকে তানা দিলে চলবে না। বার্থতাতে তার সাথ দিন ও পরে সে আরো ভালো করে করতে পারবে সেটির জন্য তাকে সাহায্য করুন। এর দ্বারা আপনার প্রতি তার বিশ্বাস আরো মজবুত হবে ও নতুন করে স্বপ্ন গোড়ার সাহস পাবে।

আরো পড়ুন : কিভাবে পিতা-মাতা এবং সন্তানের সম্পর্ক মজবুত হয়।

কিছু গুরুত্ব পূর্ণ কথা যা পিতা ও পুত্রের উভয়ের জানা উচিত।

কাগজে-কলমে তুলনামূলকভাবে সহজ হলেও, আপনার ছেলের জীবনে অনিবার্যভাবে পরিবর্তন হবে, জীবনের বড় পরিবর্তনের সময় এবং চাপ থাকবে যেখানে তাকে আপনার উপস্থিতি আগের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে। আপনার ছেলেকে যত্ন, ধৈর্য এবং একজন অভিজ্ঞ পারিবারিক পরামর্শদাতার নির্দেশনার সাথে এই সমস্যাগুলি মোকাবেলা করতে সহায়তা করা আপনার সম্পর্কের নিরাপত্তা এবং পবিত্রতা রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।

আপনার ছেলের সাথে সংযুক্ত থাকার অর্থ একজন ব্যক্তি হিসাবে তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আগ্রহী হওয়া। আপনার ছেলের স্বাধীন জীবনে জড়িত থাকার চেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে জীবনের পরিবর্তনের সময়। ভূমিকার বিপরীত দিকের জন্য অনুমতি দিন: প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন, কৌতূহলী হন এবং আপনার ছেলেকে আপনি যখন এটিতে থাকবেন তখন গ্যারেজব্যান্ড সম্পর্কে আপনাকে একটি বা দুটি জিনিস শেখাতে দিন।

আপনার ছেলে আপনার অনুমোদন চায়, কিন্তু সে তার নিজের শর্তে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করতে চায় – তাকে আপনাকে রোল মডেল হিসাবে ছেড়ে দিতে হবে এবং একজন ব্যক্তি হিসাবে তার নিজের পথ তৈরি করতে হবে। এর মানে এই নয় যে আপনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না এবং প্রক্রিয়াটির সমর্থন করতে পারবেন না, শুধু সম্পর্কটি পরিবর্তন হতে পারে। এবং, যদিও গতিশীলতা পরিবর্তিত হতে পারে, পিতা-পুত্রের সম্পর্ক জীবনের সকল পর্যায়ে দৃঢ় থাকতে পারে।

যখন সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যায়
প্রায়শই, যখন পিতা-পুত্রের সম্পর্কের টানাপোড়েন হয়, তখন পিতার শৈশব থেকেই অমীমাংসিত আঘাতের অনুভূতির একটি উপাদান থাকে। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সমস্যাযুক্ত পিতারা বিষয়গুলিকে খুব ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করার প্রবণতা রাখেন। তিনি তার ছেলের আচরণকে এমনভাবে দেখেন যেন এটি একজন মানুষ এবং একজন পিতা হিসাবে নিজের সরাসরি প্রতিফলন।

সম্পর্কের এই সমস্যাযুক্ত উপায়ের প্রতিষেধক হল পুত্রকে তার পরিচয়ে আসতে দেওয়া। ব্যক্তিগতকৃত কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং শৈশবের ক্ষতগুলির যত্ন নেওয়া আপনার সন্তানের কাঁধ থেকে দোষারোপের বোঝা এবং নিরাময় করতে পারে।

কারণ, সত্যিই, আপনার মানসিক চাহিদার যত্ন নেওয়া আপনার ছেলের কাজ নয়। পরিবর্তে, দায়িত্ব নিন, নিজের সাথে আপনার সম্পর্ক মেরামত করুন এবং আত্ম-বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনার মানবতা দেখান। আপনার ছেলেকে দেখান যে পুরুষরা এটি সব জানে না এবং কীভাবে সাহায্য চাইতে হয়।

Leave a Comment