প্রতিটি মানুষ নিজের চেহারাকে সুন্দর দেখতে চায়। তাদের চেহারা ফর্সা হোক এবং মুখ উজ্জ্বল হোক,ও যেন হয় তবে সবার ইচ্ছা পূরণ হয়না। এমন মানুষ গুলির মধ্যে কারো কারো চেহারার বর্ণ শ্যামাঙ্গিনী বা কালো হয়ে থাকে। তারা নিজের এই চেহারার বর্ণকে নিয়ে সন্তুষ্ট হয়না, তাই তারা চায় তাদের গায়ের রং যেন একটু ফর্সা বা উজ্বল হয়। তবে তাকে দেখতে ভালো লাগবে ,ও নিজের এই গায়ের রং নিয়ে কারোর কাছে লজ্জা বোধ করতে না হয়। চেহারার রং যেন সবার কাছে ভালো লাগে। এখানে জানবো কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়।
![darkness to brightness skin: কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়।](https://shikhore.com/wp-content/uploads/2023/06/SumoWebTools_1685975555-1685975563-700x400.webp)
সত্যি কথা হলো ত্বক কালো হওয়ার কারণে ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়। ত্বকের কালো দাগ দূর করার জন্য মানুষ নানান উপায় অবলম্বন করতে থাকে, কিন্তু সফলতা পায় না। বলি কিভাবে নিজেই প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের কালো ভাব দূর করবেন।
ত্বকের কালো ভাব কি?
সবাই তাদের মুখের সৌন্দযের দিকে অনেক মনোযোগ দেয়। মুখের দিকে মনোযোগ দেওয়ার কারণে মুখ সুন্দর হলেও, কিন্তু ঘাড়, কনুই ও হাত পায়ের ত্বক কালো হয়ে যায়। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, সরাসরি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি এবং স্থূলতার কারণে হাঁটু, কনুই এবং ঘাড়ও কালো হয়ে যায়। এছাড়া ত্বকের শুষ্কতাও বেড়ে যায়। ফর্সা হওয়ার প্রতিকারের জন্য ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কমে।
ত্বক কলো হওয়ার কারণ কি?
ত্বক কালো হওয়ার কারণগুলো হতে পারে:-
রক্তে মেলালিন এর পরিমান বেশি।
শরীর কালো হওয়ার জন্য সবথেকে প্রধান কারণ হলো রক্তে মেলালিন নামক এক হরমোনের পরিমান বেশি হওয়া। যে মানুষের শরীরে কম মেলালিন থাকে সে ফর্সা বা উজ্জ্বল রঙের হয়। ও যে ব্যাক্তির শরীরের মধ্যে মেলালিন হরমোনের পরিমান বেশি সে তত কালো রঙের হয়।
সরাসরি বলতে গেলে শরীরের বর্ণ নির্ধারণ করে এই মেলালিন। এটি জন্মের সময় থেকে বাবা ও মায়ের জিন থেকে ব্যাক্তির শরীরের মধ্যে আসে।
বাত, পিত্ত ও কফ দোষের কারণ
বাত, পিত্ত এবং কফের ভারসাম্যের উপর প্রতিটি ব্যক্তির স্বাস্থ্য নির্ভর করে। ভাত, পিত্ত ও কফের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে শরীরে রোগ দেখা দেয়। এর কারণে ত্বকের রং বিবর্ণ ও কালচে হতে থাকে, ত্বক প্রাণহীন ও দীপ্তিহীন দেখায়।
ক্রিম ব্যবহার বা অ্যালার্জির কারণে
আজকাল বেশিরভাগ বিউটি ক্রিমে রাসায়নিক ও কৃত্রিম উপাদান থাকে, যা ত্বককে কিছুক্ষণের জন্য উজ্জ্বল করে, কিন্তু নিয়মিত ব্যবহারে এগুলো ত্বককে কালো ও নিস্তেজ করে তোলে। কারো কারো ত্বক সংবেদনশীল। এমন পরিস্থিতিতে কৃত্রিম ক্রিম ব্যবহারে তাদের মধ্যে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর কারণে ত্বক শুষ্ক ও কালো হয়ে যায়। এই ধরনের স্কিম অ্যালার্জির জন্য ঘরোয়া প্রতিকার গ্রহণ করা নিরাপদ।
বয়স বা রোগের কারণে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বক তার স্বাভাবিক আভা এবং আর্দ্রতা হারাতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক পরিচর্যার অভাবে ত্বকে কালো ভাব চলে আসে। যেকোনো রোগের কারণে ত্বক কালো ও বিবর্ণ হয়ে যায়।
সরাসরি সূর্যের আলোর সামনে আসা
চেহারায় সানক্রিম না লাগিয়ে বা চেহারা না ঢেকে বেশি সময় সরাসরি সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে ত্বক জ্বলে যায় ও কালো পড়ে যায়। ও ধুলো বালি পরিবেশ দূষণের কারণে কালো ধোঁয়া ইত্যাদি আপনাকে আপনার উজ্জ্বল রং হারিয়ে দিতে পারে।
আরো পড়ুন : গরমে ত্বকের যত্ন রাখার ঘরোয়া উপায়।
কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়।
সাধারণত মুখের কালো দাগ দূর করার উপায় হিসেবে ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করা হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমনই কিছু ফর্সা হওয়ার প্রতিকার সম্পর্কে। ফর্সা হওয়ার এই সমস্ত প্রতিকার খুব সহজেই বাড়িতে পাওয়া যায় এবং ব্যবহার করা যেতে পারে-
কলা ও দুধের মিশ্রণ।
অর্ধেক পাকা কলা দুধের সাথে পিষে মুখে লাগান। মিনিট দশেক পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে উপকার হয় । ফর্সা হওয়ার প্রতিকারে ঠাকুরমার সময় থেকেই কলা ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি ও মানা যেতে পারে।
ফর্সা হতে কাঁচা দুধ
![darkness to brightness skin](https://shikhore.com/wp-content/uploads/2023/03/healthy-skin-jpg.webp)
বর্তমান সময়ে অরিজিনাল টাটকা কাঁচা গরুর দুধ পাওয়া মুশকিল হতে পারে। তবে যদি এটি ত্বকের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারলে বেশ উপকারী হয়। এই কাঁচা দুধ দিয়ে শরীরে বা মুখে মালিশ করার ১০ থেকে ৩০ পর ঠান্ডা জলদিয়ে স্নান করে নিলেই হবে। এটির কোনো সাইড এফেক্ট নাই। দুধ বেশি করে পান করলেও শরীর সাদা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ফর্সা হতে হলুদ পেস্ট এর ব্যবহার
কাঁচা হলুদ না হলে অরিজিনাল হলুদ গুঁড়ি নিয়ে সামান্য গোলাপ জল বা কাঁচা দুধ দিয়ে পেস্টটি তৈরী করুন সাথে অল্প নারকেল তেল দিয়ে মুখে বা শরীরে লাগানোর পর অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর স্নান করে নিন। এটি প্রতি সপ্তাহে ২ বার করে করলে ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যেই চেহারার রং অনেক পরিবর্তন হয়ে যাবে। এটির ও কোনো সাইড এফেক্ট নেই।
দই: কালো ত্বকের ঘরোয়া উপায়
দইয়ে সামান্য হলুদ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি ঘাড়ে লাগিয়ে রেখে দিন। পনের মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিনের মধ্যেই ত্বকের রং ভালো হতে শুরু করবে।
![darkness to brightness skin](https://shikhore.com/wp-content/uploads/2023/04/Summer-Skin-Care-Tips-গরমে-ত্বকের-যত্ন-রাখার-ঘরোয়া-উপায়।-1.png)
বেসন, দই এবং দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট সারা শরীরে লাগান। প্রায় দশ মিনিট পর গোসল করুন। গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করবেন না। প্রতিদিন এই পেস্টটি লাগালে ত্বকের নিস্তেজতা চলে যায় (হিন্দিতে গোরা হোন কা তরিকা)। মুখে উজ্জ্বলতা আনতে এইভাবে দই ব্যবহার করলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন : নিজেকে সুন্দর করে তোলার উপায়।সৌন্দর্য বাড়ানোর টিপস।
ফর্সা ত্বক বজায় রাখতে যা করতে যা করতে হবে।
ওপরের টিপস গুলি ফল করলে ধীরে ধীরে আপনার ত্বক ফর্সা হয়ে উঠবে ,কিন্তু এই ফর্সা উজ্জ্বল ভাব দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে হলে কিছু টিপস জেনে রাখতে হবে। তবে আসুন জেনে নেওয়া যাক কি সেই উপায় যা আপনার ত্বককে কালো পড়তে দেবেনা।
ত্বকের ফর্সা বজায় রাখতে নিয়মিত স্নান :
প্রতিদিন দিনের শুরুতে ভালো করে স্নান করতে হবে ,ও কাজের শেষে বিশ্রামের আগে আরেকবার স্নান করুন। তাহলে সারাদিন আপনার শরীর ও মস্তিস্ক ঠান্ডা থাকবে। আপনার ত্বক নরম ও ময়লা মুক্ত থাকবে নিজেকে পরিষ্কার পরিছন্ন মনে হবে।
ত্বকের ফর্সা বজায় রাখতে নরম পোশাক :
ত্বক উজ্জ্বল রাখতে পোশাকের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এমন ধরণের পোশাক চয়ন করুন যেগুলো আপনার ত্বকের সাথে মোলায়েম ভাবে মিশে থাকবে এবং আপনাকে আরাম দেবে। এছাড়াও আপনার পুরো শরীরটাকে ঢেকে রাখবে। লক্ষ্য করে দেখবেন শরীরের যে জায়গায় পোশাক থাকেনা সেই জায়গাটি তুলনামূলক ভাবে বেশি কালো হয়। তাই পুরো শরীর ঢেকে রাখার চেষ্টা করুন।
আরো পড়ুন : স্তন টাইট করার উপায়, ঝুলে যাওয়া স্তনকে আগের মতো টাইট করে তুলুন ঘরোয়া উপায়ে।
ফেসমাস্ক ব্যবহার করুন
আপনার ফেসটি ফর্সা রাখতে দিন অন্তত দুই বার ফেসওয়াস দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ও রাত্রে নাইট ক্রিম (night cream) ব্যবহার করতে পারেন। তবে সপ্তাহে অন্তত দুই বার ফেসমাস্ক ব্যবহার করুন এটি আপনার মুখ মন্ডলের ত্বকের ছিদ্র গুলি পরিষ্কার করে ও ত্বকের ওপরের জমে থাকা ময়লার স্তরটিকে তুলে ত্বককে একটি নতুন জীবন দেয়।
অতিরিক্ত রোদে ও তাপে না থাকা
যতটা সম্ভব রোদ্রুর থাকে দূরে থাকা ভালো। আপনি যদি সরাসরি সূর্যের তাপে থাকেন তাহলে রক্ত থেকে মেলালিন নামক হরমোন টি নিঃসৃত হতে থাকে। এটি যত বেশি নিঃসৃত হবে আপনি তত বেশি কালো হবেন।
শেষকথা
আমাদের এই নিবন্ধটি কোনো কালো ব্যাক্তি কে উদ্যেশ করে বানানো হয়নি ,শুধু মাত্র আপনাদের অনুপ্রেরণায় এবং প্রশ্ন উত্তরের জন্য লেখা হয়েছে। এতে লেখা প্রত্যেকটি উপায় গুলি কার্যকরী চাইলে অবশই চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এবং উপকার পেলে ও ভালো লাগলে অবশই নিজের মন্তব্য প্রকাশ করবেন। আরো কিছু বিষয় জানার থাকলে সেটিও নিচে কমেন্ট করে জানাবেন।