Aloevera Benefits: এই গরমে এলোভেরার উপকারিতা জানলে অবাক হবেন।

ঘৃতকুমারী একটি ছোট উদ্ভিদ হতে পারে, কিন্তু এর বৈশিষ্ট্য অনেকের সুপরিচিত। এর অগণিত উপকারিতার কারণে এটি প্রায় প্রতিটি ঘরেই ব্যবহৃত হয় নানান কারণে। স্বাস্থ্য, ত্বক বা চুলের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা অপরিসীম। অ্যালোভেরার উপকারিতার তালিকা দীর্ঘ এবং এই সমস্ত গুন্ সবার জেনে রাখা উচিত, তাই এই নিবন্ধের বিষয় হিসাবে অ্যালোভেরাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। একে বাংলাতে ঘৃতকুমারী বলা হয়, এটি শুধুমাত্র একটি ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যদি কেউ গুরুতর রোগে আক্রান্ত হন তবে তাকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে হবে।

এলোভেরার উপকারিতা
এলোভেরার উপকারিতা

অ্যালোভেরার ঔষধি গুণাবলী

যদি আমরা অ্যালোভেরার ঔষধি গুণাবলী সম্পর্কে কথা বলি, তাহলে এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং এই ধরনের আরও অনেক গুণ রয়েছে। এর সাথে ভিটামিন A এবং ফলিক অ্যাসিডের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিও এতে পাওয়া যায়। এটি হেলথ টনিকের মতো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। এই উদ্ভিদ হজমের উন্নতি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ডায়াবেটিসের মতো রোগে উপকারী ফলাফল দেখাতে পারে।

অ্যালোভেরার কত প্রকার আছে?

সাধারণত ৩-৪ প্রকার এলোভেরা দেখা যায় আমাদের অঞ্চলে তবে এর অনেক প্রজাতি আছে বলে জানা যায়।

অ্যালো-বার্বাডেনসিস – এটি অ্যালোভেরার সবচেয়ে সাধারণ প্রকার। এটির কোনো পরিচয়ের প্রয়োজন নেই, প্রায় বেশির ভাগ জায়গায় এই এলোভেরার জাতটি দেখা যায় ,এই অ্যালোভেরা তার ঔষধি গুণের জন্য পরিচিত।

টাইগার অ্যালো – এটি অ্যালোভেরার সবচেয়ে সুন্দর প্রজাতির একটি, খুব ছোট আকৃতির হয় যা একটি ছোট পাত্র বা পাত্রে রাখা যেতে পারে। এটিতে তলোয়ারের আকৃতির পাতা রয়েছে যার মধ্যে অসংখ্য দাগ রয়েছে।

ক্লাইম্বিং অ্যালো – এটি অ্যালোভেরার অন্যতম বিরল প্রজাতি। খুব কম জায়গায় দেখা যায় বা না দেখা যায় বললেই চলে। এর পাতা আশেপাশের গাছ-গাছালিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

লাল ঘৃতকুমারী – লাল ঘৃতকুমারী ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং, সূর্যের রশ্মি পড়লে সুন্দর লাল তামাটে রঙের মতো দেখতে লাগে। এটি অ্যালোভেরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় জাতগুলির মধ্যে একটি।

সাধারণত এই চার প্রকার এলোভেরার জাত হয়তো আমাদের চোখে পড়তে পারে।

আরো পড়ুন: অসহ্য গরম কালে শরীর ঠান্ডা রাখার উপায়।

অ্যালোভেরার উপকারিতা – বাংলাতে অ্যালোভেরার উপকারিতা

জানা যাক অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে।

ওজন কমানোর জন্য অ্যালোভেরা

বাইরের পচনের খাবার খাওয়া এবং সঠিকভাবে শারীরিক পরিশ্রম না করার ফলে ওজন বৃদ্ধির সমস্যার যখন হতে পারে । এমন পরিস্থিতিতে অ্যালোভেরার জুস বানিয়ে খেলে এই সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যায়। অ্যালোভেরাতে উপস্থিত স্থূলতা বিরোধী বৈশিষ্ট্যের খাদ্যের কারণে সৃষ্ট স্থূলতার সমস্যা কিছুটা হলেও কমানো যায়। উপরন্তু, এটি শক্তি খরচ বাড়ায় এবং কিছু পরিমাণে শরীরের চর্বি কমাতে পারে। এছাড়াও, অ্যালোভেরা জেল স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলিতে ভুগছেন এমন রোগীদের ওজন হ্রাস করতে পারে। তবে ওজন কমাতে শুধু অ্যালোভেরা জেলই নয়, এর সাথে সুষম খাদ্য ও ব্যায়ামও প্রয়োজন।

কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অ্যালোভেরা

অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য বিভিন্ন ওষুধ ও জোড়ি জটকা খান, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক জিনিস খাওয়া হলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এবং এর কোনো সাইড এফেক্ট নেই ,এখানে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্যে ঘৃতকুমারী খেলে কি হয় সে সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছি। অ্যালোভেরার মধ্যে অনেক রস আছে তা ছাড়াও এটি অনেক মোলায়েম বা হড়হড়ে। অনেক সময় বিশেষজ্ঞরা কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় রেচক খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন এই কারণে। এটি মলকে নরম করে পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারে। যাইহোক, এর রেচক বৈশিষ্ট্যের কারণে, অ্যালোভেরা খাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ একটি ওষুধি উদ্ভিদ।

ডায়াবেটিসের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা

আমরা যদি অ্যালোভেরার উপকারিতার কথা বলি, তাহলে এটি ডায়াবেটিসের জন্যও এটি কিন্তু বিশেষ উপকারী হতে পারে। অ্যালোভেরা খাওয়ার মাধ্যমে, টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা কিছুটা ভারসাম্য বজায় রাখা যায়। আসলে অ্যালোভেরার অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্যগুলি ডায়াবেটিসে জন্য কার্যকরি হতে পারে বলে মনে করা হয়। তবে এটি খাওয়ার কিছু বিশেষ নিয়ম আছে।

হজমের জন্য অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে কথা বললে, এটি পাকস্থলী এবং পরিপাকতন্ত্রের জন্যও বেশ উপকারী হতে পারে। হজমের সমস্যার জন্য অ্যালোভেরার রস বের খাওয়া যেতে পারে আরেকটি ভারতীয় গবেষণা অনুসারে, অ্যালোভেরা পেপটিক আলসারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি H. pylori (যা গ্যাস্ট্রিক সংক্রমণের কারণ) এর বিরুদ্ধে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসাবে কাজ করতে পারে, সেইসাথে এটি অ্যান্টি-আলসার বৈশিষ্ট্য যুক্ত। এছাড়াও, রোগীদের পেটে ব্যথা এবং গ্যাসের সমস্যা কমাতে পারে। হজমের সমস্যা বেশি থাকলে তাহলে তার উচিত প্রথমে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেওয়া।

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অ্যালোভেরা আধান

যদি আমরা অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে কথা বলি, তাহলে এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী হতে পারে। অ্যালোভেরা মৃগীরোগ এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য কার্যকর হতে পারে। এছাড়াও, একটি গবেষণা অনুসারে, অ্যালোভেরা স্মৃতিশক্তির উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে। যদিও, এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, তবে একজন ব্যক্তি নিজেকে সুস্থ রাখতে অ্যালোভেরা খেতে পারেন। কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই।

মুখের স্বাস্থ্যের জন্য অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরার রসের উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে, এটি মুখের জন্যও উপকারী হতে পারে। মুখের রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করতে অ্যালোভেরা ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি ভারতীয় গবেষণায় বলা হয়েছে যে ঘৃতকুমারী দন্তচিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য এটিকে মৌখিক স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী করে তুলতে পারে । অ্যালোভেরা মুখ ধোয়ার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে তবে কারো যদি হজমের সমস্যা বেশি থাকলে এটির থেকে দূরে থাকুন।

ক্ষত নিরাময়ের জন্য অ্যালোভেরা

ক্ষত নিরাময় অ্যালোভেরার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হতে পারে। এটি কোলাজেন উৎপন্নকারী কোষের বিস্তারকে উন্নত করে ক্ষত নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এই জন্যে গ্রামে গঞ্জে এই ঘৃতকুমারী অনেকে বাড়ির সামনে লাগিয়ে রাখে। যাইহোক, যদি ক্ষত জায়গাটি পুরোনো, বা যন্ত্রনা দায়ক হয় তবে এলোভেরা ব্যবহারের আগে কোনো বিশেষজ্ঞ কে দেখিয়ে নিন তাড়াতাড়ি আরাম পাবেন।

ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করার জন্য অ্যালোভেরা জেলের উপকারিতা

মুখে অ্যালোভেরার ব্যবহারও উপকারী হতে পারে। অ্যালোভেরা জেল ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতেও উপকারী। এটি ত্বককে হাইড্রেট করতে এবং ত্বকের জন্য হিউমেক্ট্যান্ট হিসাবে সাহায্য করতে পারে। অ্যালোভেরা ময়শ্চারাইজিং প্রসাধনীতেও ব্যবহৃত হয় । বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা জেল খুবই উপকারী হতে পারে। এলোভেরা দিয়ে তৈরী বাজারে আপনি অনেক রকম ফেস ওয়াশ ,ক্রিম ,জেল ,ইত্যাদি জিনিস পেয়ে যাবেন যা রূপ চর্চার জন্য পেয়ে যাবেন

বলিরেখার জন্য অ্যালোভেরা জেলের উপকারিতা

বলিরেখার জন্য লোকেরা বিভিন্ন ক্রিম এবং চিকিত্সার অবলম্বন করে। এগুলি কিছু সময়ের জন্য প্রভাব দেখায়, তবে দীর্ঘমেয়াদে তারা ত্বকে খারাপ প্রভাবও ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল হতে পারে বলিরেখার জন্য একটি ভালো প্রাকৃতিক প্রতিকার। অ্যালোভেরার ব্যবহার সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির কারণে আলোকিত ত্বকে উন্নতি দেখায়। এটি কোলাজেন (ত্বকের মধ্যে পাওয়া প্রোটিন) উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতেও সাহায্য করতে পারে। যার কারণে বলিরেখা কমার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

ব্রণের জন্য অ্যালোভেরা জেল

ব্রণ হওয়ার সময় নেই। যদিও, তারা নিরাময় পায়, কিন্তু কখনও কখনও তারা তাদের দাগ ছেড়ে যায়। মানুষ ব্রণের জন্য অনেক ধরনের ক্রিম ব্যবহার করে, কিন্তু কিছুই খুব একটা পার্থক্য করে না। এই ক্ষেত্র, অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার উপকারী হতে পারে, এটিতে অ্যান্টি-একনে বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্রণ নিরাময়ে সহায়ক হতে পারে।

চুলের জন্য অ্যালোভেরা জেল

চুল সুস্থ রাখতেও অ্যালোভেরা উপকারী হতে পারে। আসলে, অ্যালোভেরা চুলকে সুস্থ রাখতে এবং চুল পড়া রোধ করতে ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যাইহোক, এটি চুল পড়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে পারে কি না সে সম্পর্কে কোনও দৃঢ় বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। এটা মানুষের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলা যায়। কারো চুল পড়া বা চুল সংক্রান্ত কোনো গুরুতর সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া ভালো এবং তবেই অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন।

চোট নিরাময়ে ব্যথার জন্য এলোভেরা

চোট বা আঘাত যে যেকোনো সময়ে যে কোনো জায়গায় লাগতে পারে। ছোট চোট বা ব্যথার জন্য এলোভেরা বিশেষ উপকারী বলে মনে করা হয় চোট বা ব্যথার জায়গায় এলোভেরা পেস্ট করে সাথে লবন মিশিয়ে নিলে তাড়াতাড়ি ব্যথা নিরাময় হয়। তবে ব্যথা যদি খুব গুরুতর তবে বিলম্ব না করে আগে চিকিৎসক কে দেখানো ভালো।

Leave a Comment