কিডনি ভালো রাখার উপায়। Healthy Kidneys:

আমরা সবাই জানি কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি আমাদের শরীরে ফিল্টারের মতো কাজ করে। কিডনি ভালো থাকলে আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে দিতে কাজ করে। আমরা যে খাবারই খাই না কেন তাতে পুষ্টির পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর উপাদানও থাকে। কিডনি রক্ত ​​থেকে ক্ষতিকারক পদার্থকে ফিল্টার করে আলাদা করে এবং প্রস্রাব বা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করার কাজ করে।

কিডনি ভালো

আপনি কি জানেন কিডনি শুধু শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে দিতেই কাজ করে না, এর পাশাপাশি কিডনি রক্তচাপ এবং শরীরের অন্যান্য রাসায়নিকের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে? হ্যাঁ, কিডনি এই সব কাজ করে।

কিভাবে আমাদের কিডনি ভালোও সুস্থ রাখতে পারি?

আসলে ও রাখতে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত যাতে আমরা সুস্থ জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। আজকের নিবন্ধে আমরা কিডনি সুস্থ রাখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করব। তো চলুন দেখি সেগুলো কি।

কিডনি ভালো রাখার নিয়মগুলো মেনে চলুন

কিডনি ভালো রাখার জন্য ব্যায়াম করুন
কিডনি সঠিকভাবে তাদের কাজ করার জন্য, আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি বজায় রাখা প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন ব্যায়াম করা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বা কিডনি সংক্রান্ত রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে।

ব্যায়াম করুন

এর সাথে এটাও দেখা গেছে যে প্রতিদিন ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করলে রক্তচাপ খারাপ হওয়ার আশঙ্কা কমে। যারা প্রতিদিন ব্যায়াম করেন তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। কিডনি সুস্থ রাখতে ব্যায়াম করা জরুরি। ব্যায়ামের জন্য বড় মেশিনে ব্যায়াম করার দরকার নেই, বরং প্রতিদিন হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা নাচও শরীরকে সুস্থ রাখে।

কিডনি ভালো রাখার জন্য চিনি খাওয়ার উপর নজর রাখুন
আমরা যেমন বলেছি কিডনি শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে দেয়, তাই আমাদের সেসব খাবার খাওয়া কমাতে হবে যা শরীরে বিষাক্ত পদার্থের জন্ম দেয়। চিনিও এই ক্যাটাগরিতে আসে। আমাদের প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চিনি খাওয়া উচিত। মনে রাখবেন রক্তে যেন নির্দিষ্ট পরিমাণে চিনি থাকে। রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি বাড়লে কিডনি নষ্ট বা কিডনি ফেইলিউরের ঝুঁকি বাড়ে।

যাদের ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তে শর্করা আছে তাদের খাদ্যের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তে শর্করায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের কিডনি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় বেশি।

যখন রক্তে গ্লুকোজ সঠিকভাবে গ্রহণ করা হয় না, তখন কিডনিকে রক্ত ​​থেকে চিনি আলাদা করার জন্য কাজ করতে হয়। এ অবস্থায় কিডনির ওপর অনেক চাপ পড়ে যার কারণে কিডনিকে বেশি কাজ করতে হয়। এভাবে দীর্ঘ সময় চলতে থাকলে কিডনি ফেইলিউরের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
সুসংবাদটি হল যে আপনি যদি আপনার রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে পরিচালনা করেন তবে আপনি সুস্থ কিডনি নিয়ে একটি ভাল জীবনযাপন করতে পারেন।

রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখুন
শিরায় রক্তের প্রবাহ খুব মসৃণ হওয়ার জন্য এটি প্রয়োজনীয়। শিরায় দ্রুত রক্ত ​​প্রবাহ হলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। রক্তচাপ বৃদ্ধি শুধু হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাই বাড়ায় না কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।
শরীরের আদর্শ রক্তচাপ হল 120/80 mmhg। এই আদর্শ শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। যদি শরীরের রক্তচাপের হার এই মান অতিক্রম করে, তাহলে কিডনি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয়। ফলাফল কিডনি ফেইলিওর আকারে বের হতে পারে।

শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
এটা একেবারেই সত্য যে রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে কিডনির ওপর অনেক চাপ পড়ে। এর পাশাপাশি এটাও সত্য যে শরীরে অতিরিক্ত চিনির কারণে শরীরের ওজন বাড়তে থাকে। অতিরিক্ত ওজন হার্ট এবং কিডনির ক্ষতির জন্য দায়ী হতে পারে। আমাদের খেয়াল রাখা উচিত যে আমরা আমাদের ওজন ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করি। এ জন্য শুধু ব্যায়াম করলেই চলবে না, খাদ্য বা খাবারের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে।

আমরা আমাদের ডায়েটে ব্লুবেরি এবং বাঁধাকপি সহ ডিম, মাছ, দুধ এবং শস্য খেতে পারি।

কিডনি ভালো রাখতে বীজযুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। নিয়মিত পরিমাণে বীজ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। কিডনিতে পাথর বা কিডনিতে পাথরের সমস্যা এড়াতে পালং শাক ও টমেটো খাওয়া কমিয়ে দিন।

কিডনি ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত জল পান করুন
কিডনির কাজ হল রক্ত ​​থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে শরীর থেকে বের করে দেওয়া। কিডনি প্রস্রাবের আকারে শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থগুলিকে ফিল্টার করে।

drinking water

এই প্রস্রাব পানি দিয়ে তৈরি। কিডনি মসৃণভাবে কাজ করতে এবং শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ অপসারণের জন্য, আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়ার মাত্রা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করতে হবে। এর পাশাপাশি আমাদের ঘুম পূর্ণ করাও জরুরি।এই প্রস্রাব পানি দিয়ে তৈরি। কিডনি মসৃণভাবে কাজ করতে এবং শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ অপসারণের জন্য, আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়ার মাত্রা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করতে হবে। এর পাশাপাশি আমাদের ঘুম পূর্ণ করাও জরুরি।

আরো পড়ুন : পেটের গ্যাস্ট্রিক দূর করার 5টি উপায়।

ধূমপান এড়িয়ে চলুন
কিডনি ভালো রাখার জন্য আমাদের শুধু পর্যাপ্ত পানি এবং ভালো খাবারই নয়, এর জন্য দরকার ভালো জীবনযাপন বা দৈনন্দিন রুটিন। আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে স্বাস্থ্যকর জিনিস অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

আমাদের প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত এবং এর সাথে আমাদের ধূমপান বা সিগারেট ধূমপান এড়ানো উচিত।

ধূমপানের মাধ্যমে অনেক ক্ষতিকারক পদার্থ আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং তা রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় কিডনির ওপর অনেক চাপ পড়ে এসব পদার্থ বের করে দিতে। রক্তে থাকা এই ক্ষতিকারক উপাদানগুলোকে চিহ্নিত করে তা দূর করতে কিডনি বেশি কাজ করে। এই অবস্থা চলতে থাকলে কিডনির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

যারা ক্রমাগত ধূমপান করছেন তাদের অবিলম্বে তাদের অভ্যাস উন্নত করা উচিত। তামাক সেবন বা সিগারেট খাওয়া শুধু ক্যান্সারই করে না বরং হৃদরোগ ও কিডনি রোগের ঝুঁকিও বাড়ায়। যারা ধূমপান করেন তাদের অবিলম্বে ধূমপান ত্যাগ করা উচিত। ধূমপান ত্যাগ করলে কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।

অতিরিক্ত ওষুধের সেবন এড়িয়ে চলুন
মাথাব্যথা, জ্বর, কাশি ইত্যাদির ওষুধ আমাদের বাড়িতে সবসময় পাওয়া যায়। যে কোনও বাড়ির প্রাথমিক চিকিত্সার কিটে এই সমস্ত ওষুধ থাকা বেশ সহজ। আমরা অসুস্থ হলে এই ওষুধগুলি গ্রহণ করি। এটাও একটা ভালো কথা যে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন, কিন্তু আমরা যদি এই ওষুধগুলোকে আমাদের অভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করি তাহলে তা কিডনির জন্য বড় সমস্যা হতে পারে।

অত্যধিক ওষুধ গ্রহণ কিডনির স্বাস্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। এর পাশাপাশি শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের ভারসাম্যও নষ্ট হতে পারে। তাই এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা বেশি ওষুধ খাওয়ার পরিবর্তে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভালো রুটিন এবং খাবার বেছে নেওয়া।

আরো পড়ুন : কিডনি ভালো আছে নাকি ড্যামেজ হয়েছে বোঝার উপায়।

কিডনি ভালো রাখার আরো অন্যান্য উপায়

কিডনি ভালো রাখতে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর দিকেও খেয়াল রাখুন-

1.) 60 বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের জন্য সময়ে সময়ে তাদের কিডনি পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ।

2.) যাদের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা হার্ট সংক্রান্ত সমস্যা আছে, তাদের কিডনি সময়ে সময়ে পরীক্ষা করানো জরুরি।

3.) পরিবারে কিডনি সংক্রান্ত রোগের ইতিহাস থাকলেও সময়ে সময়ে কিডনি চেকআপ করাতে থাকুন।

4.) যদি ব্যক্তি বা ব্যক্তির পরিবারের কেউ কখনও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে থাকে, তবে তাদেরও সময়ে সময়ে তাদের কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।

5.) যারা বিশ্বাস করেন যে তাদের কিডনি সঠিকভাবে কাজ করছে না, তাদেরও অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা দরকার।

6.) আপনার খাদ্যের সঠিক যত্ন নিন। বেশি করে পানি পান করুন এবং স্বাস্থ্যকর জিনিস খান।

কিডনি রোগের ঝুঁকির কারণ

ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিসে উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা সময়ের সাথে সাথে কিডনির ফিল্টারিং ইউনিটগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা কিডনি রোগের দিকে পরিচালিত করে।

উচ্চ রক্তচাপ: অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ কিডনির রক্তনালীগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করে, তাদের কার্যকারিতা নষ্ট করে এবং কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়।

কিডনিতে পাথর: কিডনিতে পাথর তৈরি হলে মূত্রনালীতে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, ফলে ফুলে যেতে পারে এবং কিডনির সম্ভাব্য ক্ষতি হতে পারে।

অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা: শরীরের অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়, উভয়ই কিডনি রোগের প্রধান অবদানকারী।

ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথা উপশমকারীর ব্যবহার: নির্দিষ্ট ব্যথা উপশমকারীর ঘন ঘন বা দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার, যেমন নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ (NSAIDs), কিডনির ক্ষতি করতে পারে এবং তাদের রক্ত ​​​​প্রবাহকে ব্যাহত করতে পারে।

পূর্ববর্তী তীব্র কিডনি আঘাত: তীব্র কিডনি আঘাতের ইতিহাস, প্রায়শই গুরুতর সংক্রমণ, আঘাত, বা ওষুধের বিষাক্ততার কারণে, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে।

কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস: জেনেটিক প্রবণতা একটি ভূমিকা পালন করে, এবং কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস অনুরূপ অবস্থার বিকাশের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

খুব কম জন্ম ওজন: খুব কম জন্ম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিরা অনুন্নত কিডনি অনুভব করতে পারে, যা পরবর্তী জীবনে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় অবদান রাখতে পারে। Instagram- Follow : shikhore100

কিডনির কাজ গুলো কি কি?

কিডনির কাজ হল রক্ত ​​থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে শরীর থেকে বের করে দেওয়া। কিডনি প্রস্রাবের আকারে শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থগুলিকে ফিল্টার করে।
এর পাশাপাশি কিডনি রক্তচাপ এবং শরীরের অন্যান্য রাসায়নিকের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে?

কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ কি?

দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করে চেপে থাকা
বেশি লবণ খাওয়া অভ্যাস করে ফেলা
ক্যাফেইনে বেশি আসক্তি হওয়া
ব্যথানাশক ওষুধ বেশি ব্যবহার করা
বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়ার ফলে কিডনির ওপরে চাপ পড়ে
অ্যালকোহলে আসক্তি দেখানো
ধূমপানে আসক্তি
আরো পড়ুন : মানুষের কিডনি খারাপের লক্ষণ কি?

কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়

কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ:

1. শরীরের দুর্বলতা:
2. ক্ষুধা হ্রাস:
3. সকালে বমি বমি ভাব:
4. অ্যানিমিয়া:
5. শুষ্ক এবং চুলকানি ত্বক:
6. পিঠে ব্যথা বা তলপেটে ব্যথা
ইত্যাদি লক্ষণ গুলি দেখা গেলে বুঝেনিন আপনার কিডনির সমস্যা হতে পারে।

Leave a Comment